আমিনুল হক
নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের বীরকান্দা গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদে ডুবে তিন কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে ওই তিন শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে দুপুরের দিকে বৃষ্টির মধ্যে খেলা করতে বেরিয়ে নিখোঁজ ছিল তাঁরা।
মারা যাওয়া তিন শিশু হল, বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের বীরকান্দা গ্রামের কাউছার মিয়ার মেয়ে শিপা আক্তার (১০), কাশেম মিয়ার মেয়ে ঝুমা আক্তার (৯) ও মৃত ফারুক মিয়ার মেয়ে হালিমা আক্তার (৯)। পাশাপাশি বাড়ির বাসিন্দা ওই তিন শিশু সবসময় একত্রে খেলাধূলা করত। তাদের মধ্যে শিপা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে এবং ঝুমা ও হালিমা একই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
আড়িয়াল খাঁ নদের যে অংশে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তিন শিশুর বাড়ি থেকে এর দূরত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার। ওই তিন শিশু দুপুরের বৃষ্টির মধ্যে নদের ওই অংশে গোসল করতে গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গোসলে নামার পর নদের মাঝখানের পানিতে তলিয়ে গিয়ে তাদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তিন শিশুর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মারা যাওয়া তিন শিশুর পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার দিন দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টি নেমেছিল। এর মধ্যেই ওই তিন শিশু বাড়ির কাছাকাছি স্থানে একত্রে খেলা করছিল। এক ফাঁকে তারা কাউকে কিছু না জানিয়ে নদে গোসল করতে চলে যায়। তবে তাদের গোসল করতে নদে যাওয়ার বিষয়টি কারও জানা ছিল না। এরপর বিকেল গড়িয়ে গেলেও তারা বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন থেকেই তাদের নিখোঁজ ভেবে তাদের নানা স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। আশপাশের পাড়া-প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িঘরে খোঁজ করেও কোথাও তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার আগমুহূর্তে নদের পাড় ধরে চলাচলরত স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি নদের পানিতে এক শিশুর লাশ ভেসে থাকতে দেখেন। পরে তাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে স্থানীয় ও আশপাশের লোকজন সেখানে এসে পানিতে নামেন। এ সময় দুই শিশুর লাশ তীরে তুলে আনেন তারা। খবর পেয়ে তিন শিশুর পরিবারের সদস্যরাও ঘটনাস্থলে আসেন। চাঁদের আলো ও কয়েকটি টর্চ লাইটের সাহায্যে নিখোঁজ আরেক শিশুকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যান তারা। পরে ব্যাপক খোঁজাখুঁজির পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে আরেক শিশুর লাশ নদের পানিতে ভেসে উঠলে তাকেও তীরে তুলে আনা হয়। এরই মধ্যে খবর পেয়ে বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিহত তিন শিশুর লাশ উদ্ধার করে।
বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাজিয়া সুলতানা জানান, এমন ফুটফুটে বাচ্চা তিনটি মেয়ের নদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাটি কোনভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। নদের পানিতে এখন তেমন স্রোত না থাকলেও মাঝখানের গভীরতা প্রায় ১০ ফুটের মত হবে। হয়তো ওই তিন শিশু গোসলে নেমে নদের মাঝখানে যাওয়ার পর আর ফিরে আসতে পারেনি। সেখানে ডুবেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ জানান, খবর পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। কিন্তু সেখানে যাওয়ার আগেই মারা যাওয়া তিন শিশুর লাশ নদ থেকে তীরে তুলে আনেন স্থানীয়রা। কোন অভিযোগ না থাকায় তিন শিশুর অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবারের সদস্যদের কাছে বিনা ময়নাতদন্তে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
Leave a Reply